সনাতনী হাতে লেখা পাসপোর্ট নিয়ে দেশের বাইরে যেতে কিংবা প্রবাসীদের দেশে ফেরার সময় বিভিন্ন বিমানবন্দরে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইসিএও) নীতিমালা অনুযায়ী এপ্রিল মাস থেকে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট�এমআরপি) ও ভিসা চালুর বাধ্যবাধকতা করা হয়েছে। আইসিএও-এর শর্ত অনুসারে বাংলাদেশ সরকার যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট (এমআরপি) চালু করেছে। ফলে এখন থেকেই আর হাতে লেখা পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে না। তবে যেসব হাতে লেখা পাসপোর্ট এখনো চালু আছে, তা নবায়ন করা যাবে। জরুরি প্রয়োজন হলে এক হাজার টাকা দিয়ে এক বছরমেয়াদি পাসপোর্ট নেওয়া যাবে বলে জানা যায়। বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে। তবে ২০১৫ সাল পর্যন্ত যাঁদের পাসপোর্টের মেয়াদ রয়েছে, তাঁদের এখনই এমআরপি করাতে হবে না।
আবেদনপত্র সংগ্রহহাতে লেখা পাসপোর্টের আবেদন ফরমের চেয়ে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের আবেদন ফরম কিছুটা ভিন্ন। আগের মতোই ইন্টারনেট থেকে বিনা মূল্যে ফরম সংগ্রহ করা যাবে। বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে (http://www.dip.gov.bd) ফরম পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ঢাকাসহ সারা দেশে ১০টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে বিনা মূল্যে ফরম সংগ্রহ করা যাবে।
নতুন আবেদনপত্র
চার পৃষ্ঠার এ আবেদনপত্রে আবেদনকারীকে তথ্য সরবরাহ করতে হবে�আবেদনকারীর নাম, বাবার নাম, মাতার নাম, তাঁদের পেশা, জাতীয়তা, জন্মস্থান-সংক্রান্ত তথ্য, জন্ম তারিখ, জন্ম সনদপত্র নম্বর (যদি থাকে), জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর (যদি থাকে), বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, যোগাযোগের কোন তথ্য চাওয়া হয়েছে। এসব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে আবেদনকারীকে নির্দিষ্ট জায়গায় স্বাক্ষর ও তারিখ লিখতে হবে। এ ছাড়া আবেদনকারীকে একটি ৫৫ x ৪৫ মিলিমিটার আকারের রঙিন ছবি ফরমে আঠা দিয়ে লাগানোর পর সত্যায়ন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, দুটি আবেদন ফরম পূরণ করে জমা দিতে হবে।
পাসপোর্ট-সংক্রান্ত ফি
এমআরপির জন্য নতুন ফি নির্ধারিত হয়েছে। এখন থেকে সাধারণ পাসপোর্টের জন্য তিন হাজার টাকা এবং জরুরি পাসপোর্টের জন্য ছয় হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হবে। টাকা জমা দিতে হবে আগের মতোই সোনালী ব্যাংকের নির্ধারিত শাখায়।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
সঠিকভাবে পূরণ করা আবেদন ফরমের সঙ্গে প্রার্থীকে নিম্নলিখিত দলিলাদি জমা দিতে হবে-
১. আবেদনকারীর একটি রঙিন ছবি আঠা দিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে লাগিয়ে দিতে হবে।
২. জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম সনদপত্রের ফটোকপি।
৩. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক কারিগরি সনদগুলোর (যেমন�চিকিৎসক, প্রকৌশলী, চালক ইত্যাদি) সত্যায়িত ফটোকপি দাখিল করতে হবে।
৪. অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৫ বছরের কম) আবেদনকারীর ক্ষেত্রে আবেদনকারীর পিতা ও মাতার একটি করে রঙিন ছবি (৩০ x ২৫ মিলিমিটার)।
কারা সত্যায়িত করতে পারেন
১. সাংসদ ২. সিটি করপোরেশনের মেয়র, ডেপুটি মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৩. গেজেটেড কর্মকর্তা ৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ৫. উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ৬. পৌরসভার মেয়র ৭. বেসরকারি কলেজের শিক্ষক ৮. বেসরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ৯. দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ১০. পৌর কাউন্সিলর ১১. রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের নতুন জাতীয় বেতন স্কেলের সপ্তম বা তদূর্ধ্ব গ্রেডের কর্মকর্তারা।
আবেদন ফরম জমা
আবেদন ফরম পূরণ, ছবি সংযুক্ত ও সত্যায়ন করে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে। বর্তমানে এমআরপির আবেদন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাচ্ছে দেশের ১০টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। প্রতিটি আঞ্চলিক অফিসের অধীনে রয়েছে কয়েকটি জেলা। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসগুলোর মধ্যে কোন কোন জেলা পড়েছে জেনে নিন -
ঢাকা: ঢাকা, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলা।
ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলা।
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলা।
কুমিল্লা: কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা।
সিলেট: সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলা।
রাজশাহী: রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলা।
বরিশাল: বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলা।
রংপুর: রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলা।
যশোর: যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, নড়াইল, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা।
গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলা।
আবেদন ফরম জমা দেওয়ার সময় আবেদনকারীকে অবশ্যই নিজে উপস্থিত থাকতে হবে। ফরম জমা দেওয়ার সময় আবেদনকারীর আঙুলের ছাপ রাখা হবে এবং মুখের ছবি তোলা হবে।
পাসপোর্ট পাওয়া
সাধারণ পাসপোর্ট আপনি হাতে পাবেন সর্বোচ্চ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে। আর জরুরি পাসপোর্ট পাওয়া যাবে ১৫ দিনের মধ্যে। তবে পাসপোর্ট হাতে পাওয়াটা নির্ভর করে অনেকটা পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রতিবেদনের ওপর। তবে এ ক্ষেত্রে জরুরি পাসপোর্ট দেরি হওয়ার আশঙ্কা কম। ন্যূনতম সাত থেকে ১৫ দিনের মধ্যে হাতে পাওয়া যেতে পারে জরুরি এমআরপি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন