পানি সেতু।
ব্রিজ বা সেতু মানেই আমরা বুঝি, প্রবহমান নদী-নালা বা খাল-বিলের ওপর নির্মিত কোন সেতু। আর এ সেতুর ওপর দিয়ে চলে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি ও পথচারী। কোন কোন সেতুর দৈর্ঘ্য হয় ছোট আবার কোনটি হয় বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বা লম্বা অথবা উন্নত প্রযুক্তির। কিন্তু আপনি কি জানেন, এমন একটি সেতু আছে যেটি নদীর উপর নির্মিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেখানে গাড়ির পরিবর্তে অনায়াসে চলাচল করে নৌযান। এটা সবারই জানা এবং কোনরকম সন্দেহ নেই যে, সেতুর নিচে প্রবহমান নদী-নালার ওপর দিয়েই নৌযান চলে থাকে। কিন্তু সেতুর ওপর প্রবহমান জল আবার সেই জলের ওপর দিয়ে নৌযান! ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবেই অবাক করার মতো! হয়তো হোঁচটও খাচ্ছেন ছবিটি দেখে! তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, এরকম একটা তাক লাগানো প্রযুক্তি অর্থাৎ নদীর ওপর ওয়াটার ব্রিজ বা জলের সেতু রয়েছে জার্মানিতে। সেতুটির নাম ‘মাডবার্গ’। আর এটি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ কৃত্রিম নাব্য নালা অর্থাৎ নৌযান অতিক্রমকারী ওয়াটার ব্রিজ বা জলসেতু।
১৯১৯ সাল থেকে জলসেতু ‘মাডবার্গ’ নির্মাণের স্বপ্ন থাকলেও ১৯৩০ সালে এর প্রাথমিক নির্মাণ কাজ শুরু“ হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত কাজ স্থগিত থাকে। অবশেষে মোট ছয় বছর কাজ করার পর ২০০৩ সালের অক্টোবর মাসে সেতুটি চালু করা হয় এবং সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ওয়াটার ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পের পরিকল্পনাটি ছিল প্রায় ৮০ বছর।
নদীর ওপর এ নাব্যনালা বা জলের সেতুটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে ২৪ হাজার টন ইস্পাত এবং ৬৮ হাজার কিউবিক মিটার কংক্রিট। আর এটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৫শ’ মিলিয়ন ইউরো।
জার্মানির দু’টি খাল এল্বে-হ্যাভেল এবং মিটলল্যান্ডক্যানেল ‘মাডবার্গ’ সেতুর খুব কাছাকাছি। আর এ খাল দু’টিতেই বিস্ময়কর সেতুটি সংযোগ স্থাপন করেছে। এ দুটি বড় খালের মাঝামাঝি আবার অবস্থান করছে এল্বে নদী। মজার ব্যাপার হলো, নদীর ওপর এ জলের সেতুটি ৯শ’ ১৮ মিটার অর্থাৎ ৩ হাজার ১২ ফুট লম্বা। এল্বে নদীর বিপরীত দিকে খাল দু’টির উচ্চতা নদীটির চেয়েও কম। আর এ কারণে কোন মালবাহী জাহাজ সরাসরি এ খালটি অতিক্রম করতে পারে না। অন্য পথ দিয়ে যাতায়াত করলে জাহাজকে অনেকদূর অর্থাৎ প্রায় ১২ কিলোমিটার বাঁকে ঘুরে আসতে হয়। তাই সময় এবং জ্বালানি খরচ কমানোর জন্য জার্মান সরকার এ সেতুটি তৈরি করেছে। তবে নদীর পানি যখন কোন কারণে নিম্নস্তরের দিকে পতিত হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই জাহাজের গতি কমে যায় বা বন্ধ হয়ে আসে। অভিজ্ঞ মহল এবং পরিবেশবিদরা মনে করেন, এ জলসেতু জার্মানির জলপথের জন্য অত্যন্ত নিরাপদ, সময় সাশ্রয়ী এবং পরিবেশগতভাবে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি। তাছাড়া পর্যটকদের জন্যও এটি একটি আকর্ষণীয় স্থান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন